আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (৭৭) যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মার্কিন পর্ন অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলস। নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ম্যানহাটান শহরের যে আদালতে ট্রাম্পের বিচার চলছে, সেখানে গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন তিনি।
মঙ্গলবারের সাক্ষ্যে ২০১১ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় থেকে শুরু করে তার সঙ্গে সম্পর্ক, যৌন মিলন, অর্থপ্রাপ্তি এবং হুমকি— যাবতীয় বিষয়ে অনুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন ৪৫ বছর বয়সী এই পর্ন অভিনেত্রী। সেই বিবরণ এতটাই বিশদ ছিল যে এক পর্যায়ে ট্রাম্পের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, বিচারপ্রক্রিয়াকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন স্টর্মি। তার সাক্ষ্য বাতিলের আবেদনও জানান তারা।
আদালতের বিচারক বেঞ্চের প্রধান জুয়ান মার্চান অবশ্য সেই আবেদন খারিজ করে দেন। তবে তিনিও স্বীকার করেন যে স্টর্মি ড্যানিয়েলস এমন অনেক কথা বলছেন, যার সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
আদালতের সাক্ষ্যে স্টর্মি জানান, তার প্রকৃত নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। ছোটো বেলায় তার বাবা তাকে ও তার মাকে ত্যাগ করার পর মায়ের কাছেই বড় করেছেন। তার মা পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন এবং উপার্জন তেমন না থাকায় ছোট বেলা থেকেই আর্থিক টানাটানির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের।
এও স্বীকার করেন যে আর্থিক অনটনের কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর স্ট্রিপ ক্লাব এবং পর্নোগ্রাফিক ছবিতে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি।
২০১১ সালে নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লেক তাহোয়’তে একটি অভিজাত গলফ টুর্নামেন্টের শো-গার্ল হিসেবে গিয়েছিলেন স্টর্মি। সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে এবং প্রাথমিক আলাপ পরিচয়ের এক পর্যায়ে ট্রাম্প তাকে ‘সুন্দর ভবিষ্যতের’ প্রলোভন দেখান। সেই সঙ্গে যে হোটেলে তিনি উঠেছিলেন, সেখানে ডিনারের আমন্ত্রণও জানান ট্রাম্প।
ওই সময় ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ নামে একটি জনপ্রিয় টিভি শো সঞ্চালনা ও উপস্থাপনা করতেন ট্রাম্প। স্টর্মি ভেবেছিলেন, ওই শোতে তাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে।
নির্ধারিত সময়ে স্টর্মি হোটেল স্যুটে পৌঁছালে খানিকক্ষণ কথাবার্তার পর তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন ট্রাম্প। এ সময় প্রথম দিকে মৃদু আপত্তি জানালেও পরে আর বাধা দেননি বলে আদালতে জানিয়েছেন স্টর্মি।
আদালতকে দেওয়া সাক্ষ্যে স্টর্মি বলেন, ঘটনার পর দ্রুত তিনি স্যুট ত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু হোটেলের পার্কিং লটে যখন আসেন তিনি, সে সময় ট্রাম্পের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী তাকে এই ঘটনা গোপন রাখার জন্য হুমকি দেন।
তারপর দীর্ঘদিন আর যোগাযোগ করেননি ট্রাম্প। আদালতকে স্টর্মি জানান, এ সময় কঠিন পরিস্থিতি পার করতে হয়েছে তাকে। নিজের পরিচিত মহলে তিনি এ ঘটনা জানিয়েছিলেন এবং তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই নেতিবাচক। তিনি প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছিলেন।
পরে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে স্টর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করেন ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন এবং এ ইস্যুতে ‘মুখ বন্ধ রাখতে’ তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার প্রদানের প্রস্তাব দেন।
এ প্রসঙ্গে আদালতের সাক্ষ্যে স্টর্মি বলেন, প্রস্তাব পাওয়ার পর তিনি তাতে আপত্তি করেননি কারণ তার মনে হয়েছিল যে যদি নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন— তাহলে এই অর্থ আর পাওয়া যাবে না।
কিন্তু নির্বাচনের পর ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক সরব হয়ে ওঠেন তিনি। তার বিরুদ্ধে জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনেরও অভিযোগ আনেন।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা এ সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তিনি ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন এবং ওই ঘটনা থেকে আরও অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা ছিল তার।
স্টর্মি ড্যানিয়েল যখন কথা বলছিলেন, সে সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পও। গোটা সময় তাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা গেছে। তবে আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা এবং বিচার যদি সুষ্ঠু হয়— তাহলে বেকসুর খালাস পাবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও তিনটি ফৌজদারি মামলা আছে। সেগুলোর তুলনায় এটিকে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হলেও ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে কেবল এ মামলারই রায় আসতে পারে।
অন্য যে মামলাগুলোতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো হল, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরাজয়ের পর ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা এবং প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে সরার পর রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি অসাবধানে সংরক্ষণ করা সংক্রান্ত। এই তিনটি মামলাতেই নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প।