স্পোর্টস ডেস্ক,
ফুটবল মূলত ক্লাব নির্ভর খেলা। ফুটবলারদের আয়ের মূল উৎসই ক্লাবের হয়ে খেলার মাধ্যমে। তারা ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকায় জাতীয় দলের খেলার সময় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ক্লাবের কাছে খেলোয়াড় ছাড়তে চিঠি প্রেরণ করে। জাতীয় দলে আর্থিক সম্মানী তেমন বড় অঙ্কের হয় না সাধারণত। খেলোয়াড়দের যাতায়াত ও আনুষাঙ্গিক ব্যয় বহনের পর ফেডারেশন নিজস্ব নীতিমালা/সামর্থ্য অনুযায়ী সম্মানী প্রদান করে। জাতীয় দলের টুর্নামেন্ট/ম্যাচের জন্য ক্যাম্পে থাকা ফুটবলারদের ২০-২৫ হাজার টাকা প্রদান করে বাফুফে।
বাংলাদেশ ফুটবল দল সম্প্রতি মার্চ উইন্ডোতে দুটি বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ খেলেছে। এজন্য সৌদিতে দুই সপ্তাহ অনুশীলন ও কুয়েতে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে আবার ঢাকায় হোম ম্যাচ খেলেছে তাদের সঙ্গে। গত ১-২৬ মার্চ ২৮ ফুটবলার জাতীয় দলের ক্যাম্পে ছিলেন। এক মাস পেরিয়ে গেলেও বাফুফে ফুটবলারদের ২০-২৫ হাজার টাকা সম্মানী এখনও দিতে পারেনি।
মার্চ উইন্ডোতে জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা এক ফুটবলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, ‘দেশের জন্য অনুশীলন/খেলে সম্মানী পাওয়া এটা বড় গৌরবের সেটা অতি অল্প অঙ্কের হলেও। ফেডারেশনে একাউন্ট নাম্বার দিয়েছি এক মাসের বেশি। কিছুদিন আগেও যোগাযোগ করেছি, কিন্তু এখনও অর্থ অ্যাকাউন্টে আসেনি।’
জাতীয় ফুটবলারদের আগে বাফুফে নগদে এই অর্থ প্রদান করতে হতো খেলার আগে বা পরপর। এরপর চেকের মাধ্যমে প্রদানের ব্যবস্থা করে। এখন অবশ্য খেলোয়াড়দের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ ট্রান্সফার করা হয়।
মাথাপছিু ২০-২৫ হাজার টাকা হলে ২৮ ফুটবলারের জন্য বাফুফের প্রয়োজন সাড়ে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা। এক মাস পেরিয়ে গেলেও বাফুফে খেলোয়াড়দের সেই অর্থ সংস্থান করতে পারেনি।
ফুটবলারদের জন্য ফুটবল ফেডারেশন এই স্বল্প অর্থ প্রদানে বিলম্ব করলেও উচ্চ দামে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঠিকই ফিফা–এএফসির মাধ্যমে প্রতি মাসে বেতন পকেটে পুরছেন। নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের অনেকে এসব খোঁজও রাখেন না, আবার কয়েকজন দেখেও না দেখার ভান করেন ঝামেলা এড়াতে।
জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার ও বাফুফের নির্বাহী সদস্য ফুটবলারদের সম্মানীর ব্যাপারে বলেন, ‘আমাকে খেলোয়াড়রা প্রায়ই ফোন করে টাকার জন্য। আমরা এখনও ৬০ লাখ টাকা বোনাস দিতে পারিনি। সৌদি থাকতে আমি সাধারণ সম্পাদককে বলেছিলাম এই ব্যাপারে।
সে বলেছিল ফিলিস্তিন ম্যাচের আগে ঢাকায় এসে কিছু ব্যবস্থা করার। ২৬ মার্চ হোম ম্যাচ শেষ হয়ে এক মাসের বেশি, এখনও খেলোয়াড়রা সেই বোনাস পায়নি এবং নিয়মিত সম্মানীও। বিষয়টি অত্যন্ত বিব্রতকর।’
জাতীয় দলের ম্যানেজার বিষয়টি ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারকে অবহিত করেছেন। নতুন সাধারণ সম্পাদকের কর্মকাণ্ড এখনও বড় ধরনের প্রশ্ন বা সমালোচনার মধ্যে পড়েনি। সোহাগ কাণ্ডে তিনি আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে ছিলেন অতিমাত্রায় রক্ষণশীল।
তাই প্রধান অর্থ কর্মকর্তার নির্দেশনার বাইরে তিনি আর্থিক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই করতে সক্ষম হন না বলে ধারণা ফেডারেশনের অনেকেরই। নতুন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সভাপতির আস্থাভাজন হওয়ায় তিনিও স্বল্পদিনে ফেডারেশনে বেশ প্রভাবশালী ও নীতি-নির্ধারণী অবস্থানে।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মালদ্বীপ বাধা পার হওয়ায় জামাল ভূঁইয়াদের জন্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ৬০ লাখ টাকা বোনাস ঘোষণা করেছিলেন। সভাপতি ঘোষণা দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বাফুফের জরুরি নির্বাহী সভায় এই বোনাস অনুমোদিত হয়। সভাপতির ঘোষণা ও ফেডারশেনের অনুমোদনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও খেলোয়াড়রা সেই অর্থ পাননি।
২০২৩ সালেই বাফুফে সভাপতি ৫০ লাখ টাকা ফুটবলারদের বোনাস ঘোষণা করেছিলেন সাফের সেমিফাইনালে ওঠায়। সভাপতির সেই ঘোষিত বোনাস ফেডারেশনের ফান্ড থেকেই প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে ওঠায় সেই বোনাস নিয়ে খানিকটা যৌক্তিকতা থাকলেও বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠায় (এর আগেও এই পর্যায়ে খেলেছে) ৬০ লাখ টাকার ঘোষণা অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিজেদের আর্থিক দৈন্যতাই যেন আরও ফুটিয়ে তোলা। এতে আরও প্রমাণ হয় বাফুফের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালা কতটা দুর্বল!