Friday, November 8, 2024
Homeলিড সংবাদবেনজীরের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ ব্যারিস্টার সুমনের

বেনজীরের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ ব্যারিস্টার সুমনের

বিশেষ প্রতিনিধি,

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করা হয়েছে। আজ রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন দুদক চেয়ারম্যান বরাবর এই আবেদন করেন।

 

আবেদনে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘‘বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক। তিনি ৩০তম পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেছেন এবং ৩৪ বছর ৭ মাস পর অবসরে গেছেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা গেছে, বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন, যা তার বৈধ আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে অসম। দৈনিক কালের কণ্ঠ গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক মহাপরিদর্শক তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজিরের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন।

এরমধ্যে রয়েছে ৬টি কোম্পানি, রাজধানীর উচ্চবিত্ত এলাকায় দামি ফ্ল্যাট ও বাড়ি, বেস্ট হোল্ডিংয়ে শেয়ার, ফাইভ স্টার হোটেল- লা মেরিডিয়ান ঢাকা-র শেয়ার, গোপালগঞ্জের ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট’, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৪১৮ ডিসিমালের বিশাল জমি। এসব সম্পদ বেনজীর, তার স্ত্রী এবং কন্যাদের বৈধ আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে তার বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। উপরোক্ত তথ্য ও পরিস্থিতিতে বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী ও দুই কন্যার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।’

 

 

এদিকে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুদকের আবেদন দেওয়ার পর ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের যে অভিযোগ এসেছে, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নিতে দেখে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমি দুদকে এসেছি।

দুদকে আবেদন করে এসবের অনুসন্ধান করতে বলেছি। কারণ, সাবেক আইজিপির যদি এতো সম্পদ থাকে তাহলে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যারা সৎ কর্মকর্তা রয়েছেন তারা খুব বেশি হতাশাগ্রস্ত হবেন। যারা সৎ আছেন তাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

আর যারা অসৎ, তারা অর্থ কামানোর প্রতিযোগিতায় নামবেন। এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকলে অসৎ কর্মকর্তারা বলবেন- আমরা বেনজীর হতে চাই। যদি দুদক এসব অভিযোগের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে হাইকোর্টে যাব।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘‘সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ গত শনিবার নিজের ফেসবুকে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে তিনি কিছু স্বীকার করেছেন, কিছু অস্বীকার করেছেন। এখন আইজিপির ৩৪ বছরের চাকরি জীবনে বেতন হয় প্রায় পৌনে দুই কোটির টাকা।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শত শত কোটি টাকার মালিকানা উনার আছে, যা কাগজের হিসাবে এসেছে। আর বেহিসেবে যে কি আছে তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও মেয়েদের আয়ের কোনো উপায় ছিল না। এরপরও ছয়টি কোম্পানি থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন। গোপালগঞ্জে ১৪শ’ বিঘা জমি করেছেন।

আরকিছু দিন সময় পেলে মনে হয় তিনি গোপালগঞ্জই কিনে ফেলতেন। বৈধ না অবৈধ তা পরের বিষয়। যে হারে তিনি সম্পদ বানিয়েছেন, আর কিছুদিন হলে হয়ত উনার জমির ওপর দিয়েই আমাদের বঙ্গবন্ধুর মাজারে যেতে হতো।’’

 

 

সুমন বলেন, ‘এতো সম্পদের রিপোর্ট আসার পর ভেবেছিলাম দুদক নিজেই হয়ত একটা উদ্যোগ নেবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে এতো বড় দুর্নীতির বিষয়ে কি আর কেউ কোনো কথা বলবে না? দুদক নিজে কাজ না করলে নাগরিক হিসেবে আমাদের দ্বায়িত্ব দুদককে একটু নড়েচড়ে বসার কথা বলা। আমরা বলছি না যে, বেনজীর আহমেদ দুর্নীতি করেছেন। যে অভিযোগটা এসেছে তা বাংলাদেশের মানুষের সামনে, জাতির সামনে পরিষ্কার হোক।

তিনি যেখানেই গেছেন, সেখানেই সম্পদ গড়েছেন। দুদক যদি এই আবেদন আমলে না নেয় তাহলে আমি হাইকোর্টে যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন হচ্ছে- দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়তে হবে। আমি এমপি হিসেবে এই প্রথম দুদকে এসেছি।

যেসব জায়গায় দুর্নীতির বিষয়ে অন্যরা কথা বলবে না, আমার সাহস-সামর্থ্য থাকলে আমি কথা বলব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ আইন প্রণয়নের জায়গা। সুযোগ পেলে সংসদে আমি দুদকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘একজন অপরাধী নিজে তার দোষ স্বীকার করেন না। দুদক বলুক যে, বেনজীরের কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। কোনো দুর্নীতি করেননি। সব সম্পদ সাদা পানির মতো। দুদক নিজে স্টার্ট নেয় না। দুদককে ধাক্কা দিয়ে স্টার্ট করে দিতে হয়। কিছু পুরাতন গাড়ি আছে যা সেল্ফ স্টার্ট নেন না। দুদকও তেমন। এখন আমরা ও সাংবাদিকরা পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার কাজটা করলে তখন চলতে পারবে।

দুদক চেয়ারম্যান এক ইন্টারভিউয়ে বলেছেন, দুর্নীতিবাজরা এখন বুক ফুলিয়ে রাস্তায় হাঁটে। শুধু এ কথা বললেই উনার দ্বায়িত্ব শেষ হবে না। দুর্নীতিবাজরা যেন বুক ফুলিয়ে হাঁটতে না পারে সেই ব্যবস্থা উনাকে গ্রহণ করতে হবে। আর যদি একেবারেই কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আমাদের সবার দেশ ছাড়তে হবে।’

 

জানতে চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। কমিশনের অনুমতি পেলে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments