Friday, November 8, 2024
Homeসিলেট বিভাগসিলেটে ফুরির বাড়ির ইফতার : ঐতিহ্য না অত্যাচার?

সিলেটে ফুরির বাড়ির ইফতার : ঐতিহ্য না অত্যাচার?

বিশেষ প্রতিনিধি,

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর জনপদ সিলেটের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্যে। সিলেটের মানুষের চাল-চলন, আতিথেয়তা, সংস্কৃতি, স্বতন্ত্র ঐতিহ্যের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও আছে। সিলেটে প্রচলিত নানা ঐতিহ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে রমজান মাসে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ইফতারি নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ। যা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় “পুড়ির বাড়ি ইফতারি” বলে থাকেন অনেকে।

 

 

 

যুগযুগ ধরে সিলেটে রমজান মাসে মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার রেওয়াজ-একটা আদি প্রথা। তবে সিলেটের এই প্রচীন সংস্কৃতি নিয়ে বর্তমানে রয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা।

 

নতুন বিয়ে হলে মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে প্রথম রমজানে একবার, রমজানের মাঝখানে আরেকবার এবং রমজানের শেষ দিকে নতুন জামাই-এর জন্য কিছু গিফট, জামা-কাপড় সহ তিনবার ইফতারি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।

অঞ্চল ভেদে এর ভিন্নতাও রয়েছে, অনেক এলাকায় শুধু একবার ইফতারি দেওয়া হয়। রমজানে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে বড় থালা দেওয়া হয়।

 

মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ইফতার পাঠানোর নির্দিষ্ট কোন সময় না থাকলেও ১০ থেকে ২০ রমজানের মধ্যেই দেওয়া হয়। নানা রকম খাবারের সাথে ওই সময় মেয়ের জামাইর পরিবারের জন্য ঈদের কাপড়ও দিতে হয়। মেয়ের বাড়ি থেকে যে ইফতারি নিয়ে যাওয়া হয় সেই ইফতারি পাড়া-পড়শির প্রত্যেকের ঘরে ঘরে বিলি করা হয়।

 

প্রবীণদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রমজানে মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠানোর রীতি বেশ পুরোনো। দুই পক্ষই এই ইফতারের রীতি উপভোগ করেন। নানা আয়োজনে এই ইফতার পাঠনোর রীতি মর্যাদার অনুষঙ্গ এবং এই অঞ্চলের ঐতিহ্যও বটে।

বর্তমানে এই প্রচলন অনেকটাই কমে যাচ্ছে। তবে একেবারে বিলুপ্তও হয়নি। এটি সিলেটের একটি সংস্কৃতি। বহু বছর ধরে চলছে। অনেক পরিবারই আনন্দের সঙ্গে এটি করে থাকে।

 

 

তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সিলেট অঞ্চল থেকে ফুরির বাড়ির ইফতারি দেওয়ার রেওয়াজে পরিবর্তন এসেছে অনেকটাই। বর্তমানে অনেকেই মনে করেনে এটি প্রথার চেয়ে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি মেয়ের মেয়ের পরিবারের উপর জুলুম করার মতো। আধুনিক যুগে এ প্রথা বন্ধ করার দাবি জানান অনেকে।

 

এই প্রথা নিয়ে সিলেট মহানগর ইমান সামিতির সভাপতি, হাবিব আহমেদ শিহাব ও কাজিরবাজার জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়ার মুহাদ্দিস শাহ মমশাদ আহমদ সিলেটভিউকে জানান, এই প্রথার শুরুটা ছিল ভালো। মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে মানুষের সাথে ইফতার করতে খাবার নিয়ে যেতেন বাবার পরিবার।

তবে এখন সিটি দাবিতে পরিণত হয়েছে। যা যৌতুকের মতো। ইসলামে এমন কোন বিধান নেই। কারো উপর জোর করে ইফতারের আয়োজন চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়। যার সামর্থ্য আছে তারা স্বেচ্ছায় দিতে পারেন। তবে মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে আশা করা ভুল। আর ইফতার শুধু মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে দেওয়া হবে কেন, মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে দেওয়া হোক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments