Sunday, November 24, 2024
Homeবিনোদনবিশ্ববাজারে আমাদের সিনেমার সম্ভাবনা

বিশ্ববাজারে আমাদের সিনেমার সম্ভাবনা

বিনোদন ডেস্ক:

 

আমাদের সিনেমা ২০১৬ সাল থেকে হলিউড – বলিউডের মতোই আন্তর্জাতিক নতুন বাজারের সুসংবাদ পেয়েছে। এর মধ্যে কানাডা, আমেরিকা থেকেই আসছে বাইরের আয়ের দুই – তৃতীয়াংশ। এ ছাড়া আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইতালি, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, স্পেন, মাল্টা, সিঙ্গাপুর, জাপান, মালয়েশিয়া, ভারতেও মুক্তি পাচ্ছে আমাদের সিনেমা। বিদেশে বাংলাদেশী সিনেমার মুক্তির পরিক্রমা নিয়ে লিখেছেন সৈকত সালাহউদ্দিন।

 

বাংলাদেশি সিনেমা মুক্তির পাইওনিয়র হলো কানাডা ও আমেরিকাভিত্তিক পরিবেশক স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো। তাদের পরে রয়েছে বায়োস্কোপ ফিল্মস, রিভোরি ফিল্মস, দেশি ফিল্মস, দেশি ইভেন্টস, দর্পণ এন্টারটেইনমেন্ট, দেশি এন্টারটেইনমেন্ট, ভারতের রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট, প্যানোরমা স্টুডিওজ, শ্রী ভেংকটেশ ফিল্মস প্রভৃতি। চলুন শুরু থেকেই জেনে নেওয়া যাক।

 

সিনেমার বাজার যখন ক্রমেই ছোট হয়ে আসছিল তখন দেশের বাইরে নতুন বাজারের সংবাদ আসে কানাডা থেকে। একজন প্রবাসী বাংলাদেশি মোহাম্মাদ অলিউল্লাহ সজীব আমাদের সিনেমাকে বিশ্বজুড়ে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো’।

 

২০১৬ সালের ২৭ মে কানাডার চেইন সিনেপ্লেক্স এন্টারটেইনমেন্টের একটি থিয়েটারে মুক্তি পায় ‘অস্তিত্ব’। সিনেমাটি আয় করে ৮ হাজার ১০০ ডলার। মুক্তি পায় ‘মুসাফির’ ও ‘শিকারি’। একই বছরেই কানাডায় বাংলাদেশের সিনেমাকে প্রতিষ্ঠা দেয় চার নম্বর সিনেমা ‘আয়নাবাজি’। মাত্র চারটি থিয়েটার থেকে সিনেমাটি আয় করে ৪৮ হাজার ডলার।

 

পরের বছরেই স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো বাজার বিস্তৃত করে আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ‘প্রেমী ও প্রেমী’ মুক্তি পায় কানাডা, আমেরিকা, আরব আমিরাত ও ওমানে। কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যে মুক্তি পায় ‘পরবাসিনী’। মধ্যপ্রাচ্যে সাড়া জাগায় ‘নবাব’। তবে কানাডা, আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমানের ১৫টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়ে বড় সাফল্য পায় ‘ঢাকা অ্যাটাক’। আয় করে ৭৪ হাজার ডলার। এ বছরের শেষে এই চার দেশেই মুক্তি পায় ‘হালদা’।

 

স্বপ্ন স্কেয়ারক্রোর পরিবেশনায় ২০১৮ সালের শুরুতে কানাডা ও আমেরিকায় মুক্তি পায় ‘গহীন বালুচর’। এরপর মুক্তি পায় ‘স্বপ্নজাল’। এ বছরেই কানাডায় ‘দেবী’ ছয়টি থিয়েটার থেকেই আয় করে ৬০ হাজার ডলার। বায়োস্কোপ ফিল্মসের পরিবেশনায় ছবিটি মুক্তি পায় আমেরিকায়। সব মিলিয়ে দেবী আয় করে ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার যা দীর্ঘসময় বিদেশে আয়ের দিক দিয়ে সেরা বাংলাদেশি সিনেমা ছিল। এরপর শুধু কানাডায় মুক্তি পায় ‘দহন’। কানাডায় আটটি থিয়েটারে মুক্তি পায় ‘যদি একদিন’। বাংলাদেশি সিনেমা যখন ধীরে ধীরে অবস্থান গড়ে তুলছে তখন বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ হানা দেয়।

 

এই বিরতিতে কিছু বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। একটা সময় আমাদের সিনেমা দেশের বাইরে কমিউনিটি হল ভাড়া করে দেখানো হতো। স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো বিশ্বখ্যাত চেইনের মাধ্যমে বাংলাদেশি সিনেমাকে হলিউড – বলিউডের মতো মুক্তি দেওয়ার পাইওনিয়রের ভূমিকা পালন করেছে। চেইনগুলোর নানা জায়গায় থিয়েটার থাকে। বাংলাদেশে যেমন স্টার সিনেপ্লেক্সের কথা বলা যায়। কানাডার বড় চেইন সিনেপ্লেক্স এন্টারটেইনমেন্টের ১৫০ প্লাস লোকেশনের থিয়েটারে স্ক্রিন আছে ১ হাজার ৫০০র বেশি। এই চেইনের একটি থিয়েটারেই বাংলাদেশি সিনেমা যাত্রা শুরু করে।

 

আমেরিকার রিগাল চেইনে ৫০০ প্লাস লোকেশনে স্ক্রিন আছে ৭ হাজারের বেশি। সিনেমার্ক চেইনে ৫০০ প্লাস লোকেশনে ৫ হাজার ৯০০র বেশি স্ক্রিন রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ভক্স সিনেমাস চেইনে রয়েছে ৫৭ লোকেশনে ৫৭৩টি স্ক্রিন। এত স্ক্রিন থাকার কারণেই হলিউডের সিনেমা হাজার হাজার থিয়েটারে মুক্তি পেতে পারে। চেইনে মুক্তি পেলে সপ্তাহজুড়ে একাধিক শো থাকে। তিন দিন পর উইকঅ্যান্ড রিপোর্ট ও সপ্তাহ শেষে কমস্কোর বক্স অফিস রিপোর্ট প্রকাশ করে। চেইনের বাইরেও বাংলাদেশি সিনেমা মুক্তি দিয়েছে কিছু পরিবেশক। এটিকে বলে ফোরওয়াল। পুরো সপ্তাহের জন্য হল ভাড়া করে প্রদর্শন করা হয় সিনেমা। এক বা দুদিনের জন্যও শো দেখায় কিছু পরিবেশক। তবে এরকম সিনেমা দেখানোকে মুক্তি বলে না, প্রদর্শনী বলে।

 

চেইনে মুক্তি পেলে পুরো আয়কে বলা হয় গ্রস। ট্যাক্স কাটার পর যে টাকা থাকে বলা হয় নেট আয়। এই নেট আয় থেকে চেইনগুলো তাদের স্ট্যাটাস অনুযায়ী শেয়ার নিয়ে থাকে। সাধারণত ৫৫-৬৫ শতাংশ নেয় তারা। বাকি ৩৫-৪৫ শতাংশ সিনেমার প্রযোজক ও পরিবেশক পেয়ে থাকে। সিনেমা মুক্তির জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে। কানাডা, আমেরিকাসহ বেশিরভাগ জায়গায় ইংরেজি সাবটাইটেল আবশ্যক। মধ্যপ্রাচ্যে আরবি সাবটাইটেল।

 

সিনেমা অবশ্যই টুকে ও সাউন্ড ৫ অনুপাত ১ হতে হবে। ক্লাসিফিকেশন ফি এর সঙ্গে রয়েছে প্রমোশন খরচ। কোভিড পর্যন্ত প্রতি স্ক্রিনের জন্য ভার্চুয়াল প্রিন্ট ফি হিসাবে ৮৫০ ডলারের একটি চার্জ দিতে হতো যা বাংলাদেশের সিনেমা বেশি থিয়েটারে মুক্তির জন্য বেশ ব্যয়বহুল এবং কষ্টদায়ক ছিল। এর ফলে আয়ের একটি বড় অংশ কাটা পড়ত। কোভিডের আড়াই বছর পর ২০২১ সালের শেষভাগে কানাডা ও আমেরিকার ১৬টি স্ক্রিনে মুক্তি পায় ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’।

 

আমেরিকায় নতুন চেইন যুক্ত হয় শোকেস। এর মধ্যে সুসংবাদ হয়ে আসে চেইনগুলো ভার্চুয়াল প্রিন্ট ফি প্রত্যাহার করে নেয়। স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো পরের মুভিকে বড় রিলিজের পরিকল্পনা করে। ২০২২ সালে ‘পাপপুণ্য’ রেকর্ড গড়ে মুক্তি পায় কানাডার ৭টি ও আমেরিকার ৮৪টি মোট ৯১টি থিয়েটারে। এবার আগের চেইনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় হারকিনস এবং জায়ান্ট চেইন এএমসি। তবে কোভিড-পরবর্তী সময় সামলে সিনেমাটি উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসে সুবিধা করতে পারেনি। এরপর আমেরিকায় ৫৮টি থিয়েটারে মুক্তি পায় ‘শান’। এএমসি চেইন নিয়ে একটু বলা দরকার। ৯৪০টি লোকেশন বা থিয়েটারে তাদের রয়েছে ১০ হাজার ৪৭৪টি স্ক্রিন।

 

শুধু কানাডা ও আমেরিকায় দশ লাখের বেশি বাংলাদেশি বাস করেন। মাত্র এক লাখ বাংলাদেশি আমাদের সিনেমা দেখলেই এক মিলিয়ন ডলারের গ্রস বক্স অফিসে আয় অসম্ভব নয়। মূলত কম থিয়েটারে মুক্তি পাওয়ায় এ স্বপ্ন দূরবর্তী ছিল। অবশেষে বাংলাদেশি সিনেমার জন্য আনন্দের বড় উপলক্ষ নিয়ে আসে ‘হাওয়া’।

 

একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর স্বপ্ন স্কেয়ারক্রোর পরিবেশনায় সিনেমাটি আমেরিকায় ৭৩টি ও কানাডায় রেকর্ড ১৩টি মোট ৮৬টি থিয়েটারে মুক্তি পায়। পরের সপ্তাহে আরও দুটি থিয়েটার বেড়ে যায়। কানাডায় নতুন চেইন ল্যান্ডমার্ক সিনেমাস এবং আমেরিকায় ফান এশিয়া চেইন যুক্ত হয় নিয়মিত চেইনগুলোর সঙ্গে। মুক্তির প্রথম চার দিনেই ইউএস টপচার্টের ২৭ নম্বরে উঠে আসে ‘হাওয়া’।

 

মোট আয় করে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ডলার যা এখন পর্যন্ত সেরা আর এক মিলিয়ন ডলারের পথে স্মার্ট যাত্রা। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইতালি, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, স্পেন, মাল্টা, সিঙ্গাপুর, জাপান, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ভারতেও মুক্তি পায় ‘হাওয়া’।

 

এসব দেশে সিনেমাটি শেয়ার রিভিনিউ, ফিক্সড, চেইন ও প্রদর্শনী নানা উপায়ে আয় করেছে। ভারতে বড় রিলিজ করে রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট যা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল। বাংলাদেশি সিনেমা নিয়ে পরেও ভারতের পরিবেশকদের আগ্রহ দেখা যায়। একই বছরে বায়োস্কোপ ফিল্মস কানাডা ও আমেরিকায় ৭০ প্লাস থিয়েটারে ‘পরাণ’ মুক্তি দিয়ে বড় সাফল্য পায়। মোট আয় করে ১ লাখ ৮৯ হাজার ডলার। এতে বাংলাদেশি সিনেমার মাঝে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সিনেমাটি।

 

২০২৩ সালের মার্চে ভারতের রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট কানাডা ও আমেরিকার ৭১টি থিয়েটারে মুক্তি পায় স্যাটারডে ইভিনিং ‘শনিবার বিকেল’। তবে সিনেমাটি ভালো ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়। বরং কানাডা, আমেরিকাসহ নানা দেশে আলোড়ন তোলে ঈদুল আজহার দুটি সিনেমা ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’।

 

স্বপ্ন স্কেয়ারক্রোর পরিবেশনায় হলিউডি সিনেমার ভরা মৌসুমে ৪২টি থিয়েটারে মুক্তি পায় ‘প্রিয়তমা’। কানাডায় ৫টি ও আমেরিকায় ৩৭টি থিয়েটার থেকে আয় করে ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার। এর ফলে দেবীকে টপকে তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসে ‘প্রিয়তমা’।

 

আমেরিকার জ্যামাইকা মাল্টিপ্লেক্স থেকেই ছয় সপ্তাহে এই সিনেমা রেকর্ড আয় করেছে ৭২ হাজার ৯৪১ ডলার। আরও মুক্তি পেয়েছে আরব আমিরাত, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইতালি, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল, সিঙ্গাপুর, জাপান, মালয়েশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশে।

 

বায়োস্কোপ ফিল্মসের পরিবেশনায় কানাডা ও আমেরিকায় ২৮টি থিয়েটারে ‘সুড়ঙ্গ’ আয় করে ৯০ হাজার ডলার। সিঙ্গাপুর, ভারতেও মুক্তি পেয়েছে। আমেরিকায় মুক্তি পেয়ে প্রশংসিত হয়েছে প্রহেলিকা, ১৯৭১ সেইসব দিনসহ আরও কয়েকটি সিনেমা। ভারতের পরিবেশক প্যানোরমা স্টুডিওজ এর পরিবেশনায় বিভিন্ন দেশে মুক্তি পায় ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’। দেশে সিনেমাটি ভালো ব্যবসা করলেও বিদেশে তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। তেমন প্রচারণা ছাড়া স্বল্পসংখ্যক হলে মুক্তিকে দর্শকরা দায়ী করেন।

 

এই বছরেই পাইওনিয়ার পরিবেশক স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো বাংলাদেশি সিনেমা মুক্তির ক্ষেত্রে থিয়েটারের মাইলফলক গড়ে। যৌথ প্রযোজনার এমআর নাইন এবং দেশের প্রথম সাইবার ক্রাইম থ্রিলার ‘অন্তর্জাল’ মুক্তি পায় কানাডা ও আমেরিকার রেকর্ড ১৫০টি থিয়েটারে। তবে সংকটের গল্পও এখানে আছে। প্রত্যাশিত আয় করতে পারেনি দুটি ছবি। এর প্রধান কারণ বারবার মুক্তির তারিখ পরিবর্তন ও এর ফলে যথেষ্ট প্রচারের অভাব। এমনকি উত্তর আমেরিকায় প্রচার শুরুর পর মুক্তি পিছিয়ে দেয় ‘অন্তর্জাল’।

 

আন্তর্জাতিক বাজারে শিডিউল পরিবর্তনকে ভালো চোখে দেখা হয় না। সেখানকার দর্শকরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। মুক্তির তালিকায় থাকা কয়েকটি ছবি অনেকবার তারিখ পরিবর্তন করেছে।

 

বছরে ন্যূনতম চারটি বা ছয়টি ভালো সিনেমা দিতে পারলে বাংলাদেশি সিনেমা দেশের বাইরে অনেক ভালো আয় করতে পারে। বিশ্বে ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষী আছেন যা আমাদের সিনেমার জন্য আশীর্বাদ।

 

সবশেষ বাংলাদেশি সিনেমা কানাডা ও আমেরিকায় সাড়ে তিনশ ডলার এবং অন্যান্য দেশে একশ হাজার ডলারের বেশি আয় করেছে। মিলিয়ন ডলারের ক্লাবে ঢোকা অসাধ্য কিছুই নয়। ২০২৪ সালের আকাক্সিক্ষত সিনেমার মধ্যে রয়েছে রাজকুমার, দরদ, তুফান, কাজলরেখা, দেয়ালের দেশ, ওমর, নূর, লিপস্টিকসহ বেশ কয়েকটি সিনেমা।

 

সৈকত সালাহউদ্দিন : সাংবাদিক-উপস্থাপক ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পরিবেশক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments