বিশেষ প্রতিনিধি:
কথা রাখছেন সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ফুটপাথ দখলে রাখা হকারদের পুনর্বাসন শুরু করলেন তিনি। গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হকাররা ফুটপাথ ছেড়ে পুনর্বাসন স্থান নগরের হকার মার্কেট মাঠে চলে যাবে।
হকার নেতারা জানিয়েছেন, তারা প্রায় দুই হাজার হকারের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। তারা ধীরে ধীরে নির্ধারিত স্থানে চলে যাবেন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাঠে আপাতত সাড়ে ৩ হাজার হকারের স্থান হবে।
যদি প্রয়োজন হয় তাহলে অন্য জায়গায় তারা হকারদের জন্য ব্যবস্থা করে দেবেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে; হকাররা মাঠে থাকবে তো? এর আগে একইভাবে প্রক্রিয়া করেছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু হকাররা কথা রাখেননি।
কারণ অবশ্য গতকাল ব্যাখ্যা করেছেন হকার নেতারা। তারা জানিয়েছেন, মাঠে ব্যবসা করতে হলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। পানি ও বাথরুমের সংকট প্রকট। এবার এ সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। ফলে হকাররা কোনো সমস্যায় পড়বে না। আগের মেয়ররা হকারদের জন্য সে ব্যবস্থা করেননি বলে জানান তারা।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ১৬ই জানুয়ারি সিলেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক সভায় এক মাসের মধ্যে হকার পুনর্বাসনের কথা দিয়েছিলেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
কিন্তু ১৬ই ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে গেলেও নানা কারণে তিনি সেটি করতে পারেননি। পরে অবশ্য হকারদের দ্রুত স্থানান্তরিত করতে তিনি প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেন এবং ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে হকার মার্কেট মাঠ প্রস্তুত করেন। হকারদের জন্য যাতায়াতের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।
ফলে হকাররা এখন আর কোনো সমস্যায় পড়ার কথা নয়। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে হকার পুনর্বাসন করার সময় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট ব্যবসা করে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করেন।
এজন্য তাদেরকে সম্মানের চোখে দেখতে হবে। তিনি বলেন, হকাররা শুধু হকার না, তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তারা আমাদের ভাই, আমাদের পরিজন। তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। মেয়র বলেন, ক্রেতাদের সঙ্গে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে তাদের মন জয় করতে হবে, তবেই এখানে ক্রেতারা আসবে।
ক্রেতারা আসলে ব্যবসা ভালো হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে পারবেন। তিনি এই মার্কেটের প্রচারসহ যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে করার ঘোষণা দেন।
এদিকে পুনর্বাসন অনুষ্ঠানে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, কাউন্সিলর শান্তুনু দত্ত শন্তু, আব্দুল মুহিত জাবেদ, কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আব্দুর রকিব বক্তব্য রাখেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তোফায়েল আহমদ শেপুল, ফজলে রাব্বি মাসুম, জয়নাল আবেদীন, রুহেনা আক্তার মুক্তা, আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাউর রহমান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম শামীম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বিজয় কুমার দেব ভুলুসহ নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান শেষে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মার্কেট পরিদর্শন এবং কয়েকটি দোকান থেকে কিছু কেনাকাটা করেন।
হকার নেতা আব্দুর রকিব মানবজমিনকে জানিয়েছেন- এখনো হকারদের যাতায়াতের সমস্যা রয়েছে। মেয়র সে সমস্যাও সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। সকাল থেকে মাঠে এসে হকাররা বসতে শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, তাদের তালিকার বাইরে অনেকেই রয়েছে ভ্রাম্যমাণ হকার। তারা বিকাল পর্যন্ত নগরে ফেরি করে। পরে এসে রাস্তায় বসে যায়।
সুতরাং কেউ যাতে রাস্তায় না বসতে পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ফুটপাথে একজন হকার বসলে দেখাদেখি আরও অনেকেই বসে যান।
এতে করে সমস্যা প্রকট হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়। মাঠও প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে; ফুটপাথে আর হকার বসবে না।
এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি। প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, আপাতত যে জায়গা আছে সেখানে সাড়ে ৩ হাজারের ওপর হকার বসতে পারে। তাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে।
যদি প্রয়োজন হয় তাহলে অন্য জায়গায়ও ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানান, বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে সমস্যায় না পড়েন সেদিকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।