Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the td-cloud-library domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/sylheterkagoj/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি পুরুষ বিধুবাবুর ১১তম মৃত্যু বার্ষিকী - Sylheter Kagoj : সিলেটের কাগজ |
Saturday, April 19, 2025
Homeসিলেট বিভাগমুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি পুরুষ বিধুবাবুর ১১তম মৃত্যু বার্ষিকী

মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি পুরুষ বিধুবাবুর ১১তম মৃত্যু বার্ষিকী

বিশেষ প্রতিনিধি হবিগঞ্জ:::

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সৈনিক, ৫ নম্বর সেক্টরের বালট ও টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের সমন্বয়ক, প্রখ্যাত সমাজসেবক, নবীগঞ্জের এক সময়ের জমিদার ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় জননেতা প্রয়াত শ্যামাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত (বিধুবাবুর) ১১তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ।

“বিধুবাবু” ১৯২৭ সালের ২৭ মে অবিভক্ত ভারতের আসাম প্রদেশের সিলেট জেলার নবীগঞ্জ থানার গুজাখাইড় গ্রামের ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা জমিদার সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ও মাতা গুরুকুমারী দাশগুপ্ত। তিনি নবীগঞ্জ জে.কে. উচ্চবিদ্যালয়ে এক বছর পড়াশোনা করে ভর্তি হন সিলেট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে, সেখান থেকে এন্ট্রাস, সিলেট এমসি কলেজ থেকে আই.এ. হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করার পর কলকাতা রিপন কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন।

“কলকাতা রিডিং ক্লাব” থেকে ঘোড়া দৌড় প্রশিক্ষন এবং “কলকাতা সুটিং ক্লাব” থেকে বন্দুক চালানুর প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। মাহাত্মা গান্ধীর আদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে পূর্ব বাংলায় স্বাধীকারের চেতনায় ক্রমাগত জ্বলে ওঠে, এরপর ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন। হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী-মুজিব এর নেতৃত্বে তিনি যুক্তফ্রন্টের পক্ষে তৃণমূল কাজ করেন। মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর সাথে সেই সময়েই আদর্শিক সম্পর্ক থেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নবীগঞ্জে তখনকার সময়ে তিনিই ছিলেন মূল নেতৃত্বে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো তাঁরই নির্দেশে।

পাকিস্তান আমলে ব্যক্তিগত অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নবীগঞ্জবাসী তাঁকে ১৯৬৫ সালে নির্বাচিত করে নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন (বর্তমান পৌরসভা ও ৮নং ইউ/পি) কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। ৬৬’র ছয়দফা ও ৬৯’র গনআন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তৎকালে নবীগঞ্জে তিনিই ছিলেন আওয়ামীলীগের প্রাণপুরুষ।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের ‘নবীগঞ্জ’ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনিত করা হলেও তিনি নির্বাচনে নিস্পৃহ ছিলেন। নির্বাচন না করলেও আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সাথেই ছিলেন, অন্য অনেকের মতো দু’নৌকায় পা রাখেন নি। ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজ। ২/৩ এপ্রিল মেজর সি. আর দত্ত কর্তৃক সংগঠিত শেরপুর-সাদিপুরের যুদ্ধে তাঁর , 3Not 3 রাইফেল, দেশিয় অস্ত্র সহ শত শত লোক নিয়ে ভূমিকা রাখেন। নির্বাচিত হন নবীগঞ্জ থানা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতা। ছাত্র, যুবক, কৃষকদের সংগঠিত করে অবসরপ্রাপ্ত আনসার ও পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে গঠন করেন নবীগঞ্জের সর্বপ্রথম “মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড”।

শিলং-এ ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা জেনারেল গুরু বক্স সিং, কর্নেল গীল, মেজর বক্সী ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ হয় তাঁর। জেনারেল গুরু বক্স সিং তাঁকে ৫নং সেক্টরের বালাট ও টেকারঘাট সাব-সেক্টরের সমন্বয়ক করে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। তাঁর নেতৃত্বে ৫নং সেক্টরের অনেক গুলি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন সংগঠিত হয়। পাশাপাশি নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, দিরাই সহ ভাটী অঞ্চলে এদেশিয় ভদ্রলোকের মুখোশপড়া, সুযোগ সন্ধানী, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ও রাজাকার কর্তৃক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়ীঘর লুন্টন, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষন সহ বিভিন্ন অপকর্ম প্রতিহত করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সমূহের মধ্যে আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, তাহিরপুরের চিনাকান্দির বাজার, জামলাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়, দিরাই থানা, নবীগঞ্জ থানা ও নবীগঞ্জ বাজারসহ অসংখ্য যুদ্ধ। যুদ্ধ বিধ্বস্থ নবীগঞ্জ পূণ:গঠনে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। সেই সময় সরকারী বরাদ্দের পাশাপাশি নিজ তহবীল থেকে আর্থিক সহযোগীতা ও বাড়ীঘর পূর্ণ:নির্মানে সহযোগিতা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নবীগঞ্জবাসীসহ তাঁর সহযোদ্ধা, ভক্ত, শুভাকাঙ্খী সকলের প্রত্যাশা ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের এই কিংবদন্তিকে সরকার বীরত্ব ভূষন খেতাবে ভূষিত করবে। তাঁদের এই প্রত্যাশা যেমন পূর্ণ হয়নি, তেমনি স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও অধিক সময় অতিবাহিত হলেও তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাঁর জন্ম ও কর্মভূমি নবীগঞ্জে স্মৃতি স্বরূপ কোন কিছু করা হয়নি।

সারাদেশে যখন কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে তাঁদের নামানুসারে সড়ক, চত্ত্বর বা প্রতিষ্টানের নামকরনের উদ্যোগ গ্রহন করেন। এক্ষেত্রে বিধুবাবুর প্রতি এই অবহেলা সত্যিই পীড়াদায়ক। তাঁর বাড়ীর পাশ দিয়ে যাওয়া বানিয়াচং-নবীগঞ্জ রোডটি তাঁর নামানুসারে বিধুবাবু সড়ক নামকরণ করার দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসীর। তিনি দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকার পর ভারতের কলকাতা শহরের একটি ক্লিনিকে ৯ মার্চ ২০১৩ ইং শনিবার রাত ১১.০০ মিনিটে ইহলোক ছেড়ে পরলোক গমন করেন চিরকুমার বিধুবাবু।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments