বিশেষ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ‘শ্রীপুর উপ স্বাস্হ্য কেন্দ্রে’ নাকের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় এক কিশোরী এখন মৃত্যুশয্যায়। উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের ‘শ্রীপুর উপস্বাস্হ্য কেন্দ্রে’ দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় উপ সহকারী মেডিকেল অফিসার বির্তকিত সেকমো চিকিৎসক মিঠুন সরকারের ভুল চিকিৎসার খেসারত দিচ্ছেন মাহিমা নামের এক কিশোরী।
জানা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারী উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের নয়াবন্দ গ্রামের ছুরত জামানের মেয়ে মাহিমার (১৭) নাকের সমস্যা নিয়ে ‘শ্রীপুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে’ দায়িত্বরত উপসহকারী মেডিকেল অফিসার সেকমো চিকিৎসক মিঠুন সরকারের চেম্বারে আসেন চিকিৎসা সেবার জন্য।
তিনি রোগীকে দেখে নাকের ভিতরে মাংস বেড়েছে বলে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই দ্রুত তার চেম্বারেই নাকের ভিতরে অপারেশন করেন। অপারেশনের পর রোগীর অঙান হয়ে পড়লে তাকে এক সপ্তাহের ওষুধ দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে চেম্বার থেকে দ্রুত সটকে পড়েন মিঠুন সরকার। এইদিকে রুগীকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর নাক দিয়ে রক্ত এবং মুখ ফুলতে শুরু করে।
একপর্যায়ে রুগীর অবস্থা জটিল হলে তাকে দ্রুত তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রথমে নিয়ে যায় হয় তার পরিবার। এখানকার জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রোগীর বেগতিক অবস্হা দেখে তাকে দ্রুত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেপার করেন। সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। গত ৯দিন ধরে ধরে ভূল চিকিৎসার ফলে এই কিশোরী বর্তামনে ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুশয্যায় রয়েছে।
গতকাল সরজমিন গিয়ে জানা গেছে, এর আগেও উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং বাজারের ব্যাক্তিগত চেম্বারে রোগীদের সঙ্গে বির্তকিত চেকমো চিকিৎসক মিঠুন সরকার ভুল চিকিৎসা এবং বাজে আচারণের জন্য একাধিক বার লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছেন।
গত ২৬ শে ফেব্রুয়ারী তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় বৃদ্ধ বাবুল পাল নামে একজনকে পা দিয়ে লাথি মারেন এই সেকমো চিকিৎসক।
এরজের ধরে তার অপসারণ এবং বিচার চেয়ে স্থানীয় শ্রীপুর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে ক্ষুব্ধ জনতা। পরে তাৎক্ষণিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী হায়দারের মধ্যস্হতায় বাবুল পালকে হাতে পায়ে ধরে বিষয়টি ধামাচাপা দেন বির্তকিত মিঠুন সরকার।
স্থানীয় তরং গ্রামের মোক্তার হোসেন আখঞ্জি জানান, এই সেকমো চিকিৎসকের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন হাওর পাড়ের অনেক রোগীই।
তিনি এখানে একটি দালান চক্র গড়ে তোলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং বাজারে তার ব্যাক্তিগত চেম্বারে অপকর্ম করেছে। এই উপস্বাস্হ্য কেন্দ্রে হাওবাসীর কথা চিন্তা করে একজন ভালো মানের এমবিবিএস ডাক্তার দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
নয়াবন্ধ গ্রামের কিশোরীর পিতা ছুরত জামান বলেন, আমার মেয়ের নাকের সমস্যা তাকে চিকিৎসার জন্য তার মা নিয়ে যান ডাক্তার মিঠুন সরকারের কাছে। তিনি রুগী দেখে কোনো কিছু না বলেই চেম্বারে নাকের ভিতর দ্রুত ভুল অপারেশন করেন। এরপর মেয়ের নাক ফুলে মারাত্মক আকার ধারণ করলে দ্রুত তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করি।
আমার মেয়ে এখন চোখে কম দেখছে। বর্তমানে ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার মেয়ে মৃত্যুশয্যায় রয়েছে। তিনি বলেন, হাওর এলাকা হওয়ায় মিঠুন সরকার নিজেকে বড় ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতেন। আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
শ্রীপুর উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা সদ্য বদলি হওয়া বির্তকিত সেকমো চিকিৎসক মিঠুন সরকারের ফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মির্জা রিয়াদ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চেকমো চিকিৎসক মিঠুন সরকার নাকের ভিতর অপারেশন করার মতো কোনো যোগ্যতা তার নেই। তার ভুল চিকিৎসায় কিশোরী রোগিটি বর্তমানে ওসমানীতে আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে।
তার বির্তকিত এমন কর্মকান্ডের জন্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারী বিকালে ‘শ্রীপুর উপস্বাস্হ্য কেন্দ্র’ থেকে ছাতক উপজেলার ‘সৈদেরগাঁও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে’ বদলি করা হয়েছে।