বিশেষ প্রতিনিধি:
এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ।
সিলেটের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির ঘটনায় ভুক্তভোগীরা অতিষ্ঠ। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল, বনাঞ্চল, পাথর কোয়ারি, বালুমহাল, হাওর, নদীপথ ও পরিবহন সেক্টরে চাঁদবাজি হচ্ছে অহরহ। কোনোটি প্রকাশ্যে কোনোটি নীরবে।
সিলেট নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ তোফায়েল আহমদ শেপুলের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাসরিন আহমদ। শেপুল ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে বাসা দখলের অভিযোগ করে সিলেট প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন ঐ নারী।
তবে কাউন্সিলর শেপুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রবাসী নাসরিন এ বিষয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় জিডি করেছেন।
একাধিক সূত্র জানায়, ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠনের কমিটি করতে গেলেও উচ্চপর্যায়ে চাঁদা দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে চাঁদার নাম হয় ‘অনুদান’। নানা স্তরে চাঁদাবাজির ঘটনার সঙ্গে পর্দার আড়ালে থাকে ক্ষমতাসীন দল বা কোনো স্থানে বিরোধী দলের কেউ। তাই অনেকেই প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। নীরবে চাঁদা দিয়ে মান-সম্মান রক্ষা করেন।
সিলেট ডিআইজি রেঞ্জ অফিসের পুলিশ সুপার (এডমিন অ্যান্ড ফিনান্স) জিদান আল মুসা বলেন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মের বিষয়ে পুলিশ অত্যন্ত সতর্ক। তিনি বলেন, সিলেটে সেভাবে বড় আকারের চাঁদাবাজির ঘটনা নেই। তবে এ বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছি। তিনি এও বলেন, কেউ অভিযোগ করলে অপরাধীর ছাড় নেই।
সবজির আড়ত ও ট্রাকে চাঁদাবাজি:
নগরীর সবজির আড়ত ও ট্রাকে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে কিছুদিন আগে রাস্তায় নেমে আসে।
সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সিলেটে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীর ঘটনা জাতীয় সংসদেও উত্থাপন করেছিলেন।
‘হিজড়া’ বেশে অত্যাচার : ‘হিজড়া’ সিলেটবাসীর জন্য আরেক অত্যাচারে রূপ নিয়েছে। জোরপূর্বক যেখানে সেখানে চাঁদা আদায় করে তারা। এমনকি বাসাবাড়িতে গিয়ে বাচ্চাদের এক রকম জিম্মি করে তারা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। এ ক্ষেত্রে বাসায় একা থাকা গৃহিণীরা পড়েন বিপাকে। সিলেটের ট্রেনগুলোতে তাদের অত্যাচারে প্রতিদিন যাত্রীরা তটস্থ থাকেন।
বিয়ে-শাদির দিন বর বা কনের গাড়ি আটকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবির ঘটনা যেন স্বাভাবিক। তারা অনেক সময় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চাঁদাবাজি করে। এমনকি বিয়ের দিন তারিখও সংগ্রহ করে নোট করে রাখে।
নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বুঝে বাসায় গিয়ে হাজির হয়। সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী চক্রও অনেক সময় ‘হিজড়া’দের বেশে এসব কর্মে লিপ্ত থাকে। বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ফাস্টফুডের দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাঁদাবাজির শিকার হয়।
শিল্প এলাকায় চাঁদাবাজি :
এদিকে হবিগঞ্জের অলিপুরে শিল্পাঞ্চলে চাঁদাবাজির সঙ্গে অসত্ পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কোনো কোনো স্থানে সাংবাদিক পরিচয়েও চাঁদাবাজি চলে। শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে ইউপি চেয়ারম্যানের ছাড়পত্র আনতেও লাখ টাকা চাঁদা লাগে—এমনও অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে হবিগঞ্জে শিল্পাঞ্চল থেকে পূজাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একজনকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে।
সিলেটের সমৃদ্ধ বনাঞ্চলেও চাঁদাবাজি হতে মুক্ত নয়। প্রায় সময় বৃক্ষ নিধন হয় চাঁদা দিয়ে। আবার চুরি হওয়া বৃক্ষ ধরা পড়লে তা কম মূল্যে বিক্রয় হয় আরেক গ্রুপকে চাঁদা দিয়ে। বিভিন্ন ধরনের পরিবহন, বালু মহাল, জলমহাল সব স্থানেই চাঁদাবাজি।
সারী নদীতে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : জৈন্তাপুরে সারী নদী হতে বালু উত্তোলনে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটনায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক তিন জনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, ঐ স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছিল নৌকা প্রতি ৫০০ টাকা চাঁদার মাধ্যমে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে এই অযৌক্তিক চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় শ্রমিকদের উপর চাঁদাবাজরা হামলা চালায়।
এ ব্যাপারে চারিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান সেলিম বলেন, দীর্ঘদিন হতে প্রশাসনের সহায়তায় চাঁদাবাজ চক্রটি শ্রমিকের নিকট হতে নৌকা প্রতি ৫০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে আসছে।
তারা চাঁদা আদায়ের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। শ্রমিকরা চাঁদা না দেওয়াতে চক্রটি তাদের উপর হামলা চালায়। এই অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছে সিলেট জেলা ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।